আজ সকাল থেকেই আকাশটা মুখ ভার করে রয়েছে।সঙ্গে মৃদু ঝোড়ো হাওয়া পারিপার্শ্বিক পরিবেশটাকে উত্তাল করে তুলেছে।সকাল বেলা বাড়ির ঝুল বারান্দায় বসে চা খাওয়াটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস।আজ বাবার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। নাহ্!!!আগে কখনো এরকমভাবে ভাবিনি।না!কখনোই ভাবিনি।বাবা বাড়িতে নেই আজ দুই দিন হলো।দুই দিন আগে সকালবেলা-
(১)
লুঙ্গি পড়ে, খালি গায়ে বসে বাবার নাকি খাঁটি দুধের কড়া চা আর সন্দেশ বিস্কুট খেতে ভালোলাগে।এর সঙ্গে ৯৮.৩ রেডিও মিরচিতে বসে কালীকথা শুনতো বাবা। কিন্তু ইদানীং খুব একটা শোনেন না।আজও তেমনই দৃশ্য। আমি সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে অফিসে চলে যাই।যাওয়ার পথে আমার আদরের রাজকন্যা বর্ণমালাকে স্কুলে নামিয়ে দিই।আজও তেমন তৈরী হয়ে আমার অর্ধাঙ্গিনী মিসেস মন্দিরাকে বললাম-“কই গো তোমার হলো?এখানেই তো সাড়ে আটটা বাজাবে দেখছি”।হেঁসেল থেকে মন্দিরা বলে চলেছে-“হ্যাঁ তোমার আর কি! সকালবেলা অফিসে বাহির হয়ে যাও।বাড়ি আসো রাতে। একদিকে তুমি আরেকদিকে তোমার মেয়ে,আর তোমার বাবা তো আছেই। আমি তো তোমাদের ফায়-ফরমাশ খাটার জন্য এসেছি।উফ্! বাবা কেন যে তোমাকে বিয়ে করতে গেলাম”। আজ্ঞে হ্যাঁ এই বক্তৃতা রোজ চলে আমাদের বাড়িতে।আমি ঠিক পৌনে আটটায় বাড়ি থেকে বাহির হলাম। সারাদিন অফিসে খাটা-খাটনির পর বাড়ি আসলাম।রাতে ডিনার সেরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আজকের দিনটা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা আলাদা।বাবাও কথা বলতে এলো না।বাড়িতে এসে দেখলাম ওনার ঘরের দরজা বন্ধ।মন্দিরার মুখে কোনো বিকার নেই। রাত সাড়ে এগারোটায় মন্দিরা সব কাজ সেরে স্নান করে এসে শুলো।অন্যান্য দিন গল্প করে।আজ চুপচাপ। আমি নিজেই প্রশ্ন করে বসলাম- “মন্দিরা আজ কি হয়েছে গো! তুমি এত চুপচাপ! বাবাকেও দেখলাম না। শরীর-টরীর খারাপ করেছে নাকি?” চুপচাপ দেখে আবার বললাম-“কি গো!বলো”এবার মন্দিরা তিরের বেগে বিছানায় উঠে বসলো।ভ্রু কুঁচকে বলল-“সেটা তোমার বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। বুড়ো ভাম একটা।লজ্জা করলো না ওনার আমার ইনারওয়্যার নিজের ঘরে নয়ে আসতে? আবার আমি বলতে গিয়েছি বলে আমাকে সজোরে থাপ্পর কষালো?” আমি হতচকিত হয়ে বললাম “মন্দিরা এসব কি বলছো তুমি?যে মানুষটা মা ছাড়া কোনো নারীর দিকে তাকায়নি, তাকে এরকম অপবাদ দিও না”।মন্দিরা কথাটা শোনামাত্র তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলল-“তোমার লাই পেয়ে উনি বিগড়েছেন।আর শোনো এই বুড়ো বয়সে এত শখ!বৌমাকেও ছাড়লো না! ছিঃ ছিঃ!শোনো তুমি যদি ওনাকে এই বাড়ি থেকে বিদায় না করো আমিই তবে কাল নিধিকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।ওনার ভাগ্য ভালো আমি ওনাকে পুলিশে দিইনি”।কথাটা বলে মন্দিরা শুয়ে পড়লো।পরদিন সকালে আমি বাবাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম-“বাবা তুমি মন্দিরাকে কেন মেরেছো?”বাবা বললেন-“মারবো না তো কি করব? আমি নাকি ওর ইনারওয়্যার আমার ঘরে নিয়ে এসেছি।অথচ আমি ছাদেই যাইনি কাল জামাকাপড় তুলতে।তোর বউকে বল এই বিনয় কৃষ্ণ বসু কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেনি।আজও করবে না”।মন্দিরা তক্ষুনি হেঁসেল থেকে ছুটে এসে ফোঁপাতে লাগলো আর বলতে লাগলো-“দেখলে তো, তোমার বাবা আমাকে মিথ্যেবাদী বলল।এরপরেও তুমি চুপ থাকবে!”আমি বাবাকে বললাম-“বাবা কাজটা তুমি ঠিক করোনি।ওর কাছে ক্ষমা চাও।আর শোনো আজ বিকালে তৈরী থেকো। তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে ”।কথাটা শোনামাত্রই বাবার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।ভাঙা গলায় হাত দুটোকে উঁচু করে বলে উঠলো-“এই কড়া পড়ে যাওয়া হাত দুটোতে তোকে কোলে করে মানুষ করেছিলাম।এখন তোর বৌ বাচ্চা আছে।এই বুড়োটাকে তুই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আয়।ভালোই হবে”।বিকালে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম।আসার সময় বাবা একটাই কথা বলল-“বাবু কখনো এমন কিছু করিস না যার জন্য পরে অনুশোচনায় পড়তে হয়”।এই ঘটনার পর , পরদিন সকালে-
(২)
সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছি।রাজ্যজুড়ে করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে রাজ্য সরকার পনেরো দিনের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন করে দিয়েছেন দেখে আমি মন্দিরাকে ডেকে বললাম-“মন্দিরা আজই মুদি সদাইটা তুলে রাখতে হবে।লকডাউন হবে”।মন্দিরা কিছুক্ষন পর একটা সুটকেস আমার সামনে এনে ফেলে দিয়ে বলল-“আগে তোমার বাবাকে এই জঞ্জালটা দিয়ে এসো।যত্তসব আবর্জনা”।আমি সুটকেসটা খুলে দেখি তার মধ্যে ধুলো মাখা একটা ডায়রি এবং কিছু ছবি আর মায়ের একটা শাড়ি আর ঐ দু তিনটে আনন্দমেলা পত্রিকার কেটে রাখা অংশ।ছবিগুলো আমার আর বাবার। আমার ছেলেবেলার ছবি।বাবা মায়ের বিয়ের ছবি।আর পত্রিকার কেটে রাখা অংশগুলোতে আমার কিছু আঁকা যেগুলো কোন ছোটবেলায় আমি পত্রিকায় দিয়েছিলাম।ডায়রিটা হাতে নিয়ে ধুলো ঝেরে ডায়রিটা খুললাম।প্রথম পাতায় সুন্দর করে একটি লেখা-
“শ্রী চরণেষু
স্বঁর্গীয়া শ্রীমতি ইন্দিরা রানীর
চরণকমলে”
হ্যাঁ ইন্দিরা রানী বসু আমার ঠাকুমা।যদিও কখনো দেখিনি।বাবা ছোটোবেলায় খুব বলতো ওনার কথা। এরপর ডায়রিটা পড়তে শুরু করলাম।প্রথমে লেখা-আজ ২৬ শে নভেম্বর, ১৯৯৪: আজ আমার বউ নীরা সন্তান প্রসব করে আমাকে ছেড়ে চিরকালের মতো চলে গেছে ঘুমের দেশে।সে আমাকে তার শেষ চিহ্ন হিসাবে একটা ফুটফুটে রাজপুত্তুর দিয়ে গেছে।আদর করে সেই রাজপুত্তুরের নাম রাখলাম সৌরিন। আমার কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব।রাজপুত্তুরকে মানুষ করা।কেন নীরা খুব প্রয়োজন ছিলো এত তাড়াহুড়া করার!কেন একটু থেকে গেলে হতো না?বলেছিলাম আমরা একসাথে বৃদ্ধ হবো।তা আর হলো না। তোমার স্মৃতি আগলে ধরে আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো নীরা। যেখানেই থেকো ভালো থেকো।এরপর আরো অনেক রকমের লেখা।আজ আমার রাজপুত্তুর প্রথম হাঁটতে শিখেছে বা প্রথম ইস্কুলে যাচ্ছে।ইত্যাদি ইত্যাদি।এভাবে পড়তে পড়তে মাঝের পাতায় আমার আর বাবার একটা সুন্দর ছবি।সাদা কালো ছবি হলেও বেশ সুন্দর।ডায়রির শেষ পাতায় একটা চিঠি লেখা।কিছুটা এরকম-
“আদরের রাজপুত্তুর,
জানিস তুই যখন তোর মায়ের গর্ভে প্রথম এলি সেদিন তোর মা ভীষন লজ্জা পেয়েছিলো আমাকে বাবা হওয়ার খবরটা দিতে। আমি ভাবতাম আমার একটা রাজকন্যা হবে। কিন্তু তোর মা চাইতো রাজপুত্তুর হোক।ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম বলে আমাদেরকে তোর মামারা,রাজামশাই,দিদিমা কেও মেনে নেননি।তাতে তোর মায়ের কোনো আক্ষেপ ছিলো না। আমার সামান্য মাইনের টাকায় সে দিব্যি সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছিলো এই ছোট্ট সংসারটা। এরপর যেদিন তুই হলি সেদিন তোর মা আমাকে ছেড়ে চলে যায় ঘুমের দেশে।রেখে যায় এক ফুটফুটে রাজপুত্তুর।এই দুটো হাতে তোকে মানুষ করেছি।খাওয়ানো,পড়ানো,ইস্কুলে নিয়ে যাওয়া আবার অফিসে কেরানির কাজ।যে কারখানাটায় কাজ করতাম ঐ কারখানাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তিনটে মাস ঘরে বসা।নিজে না খেয়ে তোকে খাওয়াতাম।এমন কত রাত আমি না খেয়েই শুয়ে পড়েছি।খিদের জ্বালায় বড় রাস্তার মোড়ের তেলেভাজার দোকানের ফেলে দেওয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারও খেয়েছি। তবুও তোকে কখনো বুঝতে দিইনি যে সংসারে অভাব। আমি তোর বাবা তোর মায়ের ভূমিকায় ছিলাম।তোর মা তার সব ভাবনা আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো। এরপর যেদিন তুই তোর বন্ধু মৃদুলের দেখে একটা কম্পিউটার চাইলি সেদিন আমি আমার বড্ড শখের তোর মায়ের উপহার দেওয়া ঘড়িটা বিক্রি করে কম্পিউটার কিনে দিই।হাইপ্রেসার হাইসুগার ধরা পড়েছিলো। কিন্তু হিসেব করে দেখেছিলাম ওষুধ কিনে খেতে গেলে তোর মাস্টারদের মায়না দিতে পারব না।তাই রোগের তোয়াক্কা করিনি। এরপর তুই বিয়ে করলি।তোর সংসার হলো।আমার একটা মেয়ে সন্তানের খুব শখ ছিলো।বৌমাকে তাই মেয়ের মতো দেখতাম। কিন্তু তুই যখন অফিসে যেতিস বৌমা আমাকে ভীষণভাবে তিরস্কার করত।শেষদিন তো অপবাদ দিয়ে বসল আমি নাকি তার অন্তর্বাস নিজের ঘরে এনেছি।অথচ সেদিন আমি জামাকাপড় তুলিইনি।রাজপুত্তুর আমি তোকে মানুষ করে যে ঋণ করেছিলাম তা আজ তুই শোধ করে দিলি।বলে ‘মা বাবার ঋণ শোধ করা যায় না’!ভুল কথা।তুই তা প্রমাণ করে দিলি।বুকের মধ্যে কষ্টের পাহাড় জমে রয়েছে।তোর মা তো এসব বুঝলো না।দুম করে চলে গেলো।ভালো থাকিস বাবা।আমাকে ক্ষমা করে দিস”। ইতি- ঋণমুক্ত বাবা
(৩)
চিঠিটা পড়া শেষ হলে দেখি চোখ জলে ভরে গেছে।চোখের সামনে সবটা ভেসে উঠলো। বাবার কষ্টের পরিশ্রমের ফলাফল আমিই।সেই আমিই কিনা। হঠাৎ কারোর ডাকে সম্বিত ফিরলো।দেখি মীনা,আমাদের বাড়ির পরিচারিকা সে আমাকে ডাকছে।“দাদাবাবু,ও দাদাবাবু এখেনে এইভাবে বসে হুতির লগে কাঁদতিছেন!”আমার সাড়া না পেয়ে সে তার বৌদিমণিকে ডাকতে লাগলো।“বৌদিমনি ও বৌদিমনি।এইপানে আসো।দেকো,দাদাবাবু হুতির লগে কাঁদতিছেন”।মন্দিরা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে মীনাকে বলল-“কি রে ডাকছিস কেন?”মীনা আমার দিকে ইশারা করে বললো-“ঐ দেকো।দাদাবাবু কাঁদতিছে”।মন্দিরা আমাকে বলল-“এখনো যাওনি?”আমি মন্দিরার দিকে চিঠিটা দিলাম।মন্দিরা সবটা পড়ে বিরক্ত হয়ে বলল-“বুড়ো ভাম!এত আবেগী আমার কাছে চলবে না। আমার ইনারওয়্যার নিয়ে এসে আবার এত আবেগ।লজ্জাও নেই”।মীনা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল-“বৌদিমনি কি হয়েছে গো?”মন্দিরা বলতে লাগলো-“আর বলিস না।ঐ বুড়োটা কাল আমার ইনারওয়্যারগুলো নিজের ঘরে এনে রেখেছিলো বিকালে।তখন তো আমি পাশের মিতাদির বাড়ি গিয়েছিলাম।এসে এসব দেখে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম।তো উনি দোষ করে আবার চড় কষালেন।সাহসের বলিহারি”।মীনা হেসে বলল-“আরে বৌদিমনি তোমার অন্তর্বাস তো আমিই ছাদ থেকে তুলে এনেছিলাম।নীচে নেমে দেখলাম তোমার ঘরের দরজা বন্ধ তাই মেসোমশাইয়ের ঘরে রেখেছি”।এই কথা শুনে মন্দিরা মীনাকে বলল-“আচ্ছা মীনা আজ তুই আয়”মীনা চলে যেতেই মন্দিরা কেঁদে উঠলো।বলল-“আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।আমি বুঝতে পারিনি।বাবাকে ফিরিয়ে আনো”।আমি তৈরী হয়ে বাহির হতে যাবো ঠিক তখনই একটা ফোন আসলো।ফোনটা রিসিভ করে -“হ্যালো”‘হ্যালো এটা কি বিষয় বাবুর বাড়ির নাম্বার?’“হ্যাঁ আমি ওনার ছেলে।কেন বলুন”‘সরি মিস্টার,বিনয় বাবু আজ একটু আগে কার্ডিয়াক অ্যাটাকে মারা গেছেন।ফোনে সমস্যা হচ্ছিলো,তাই জানাতে দেরী হলো।কোভিড অতিমারির জন্য ওনার বডি ওভাবে দেওয়া যাবে না।একটু পরেই বডি যাবে আপনার বাড়িতে’
আমি মাটিতে ধপ করে বসে পড়লাম।বাবা আর নেই।এটা মেনে নিতেই যেন কিরকম একটা বেদনা বুকটাতে জমছে।আমার আদরের রাজকন্যা নিধি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল-“পাপা দাদান কোথায়?”আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম-“মা তোর দাদান যে আমাকে রেখে চলে গেলো দিম্মার কাছে”।বাবার বডি আসলে করোনা মহামারীর জন্য সামনে যেতে বা ছুঁতেও পারলাম না।শান্ত মুখটাতে চন্দনের ফোঁটা,গলার সাদা রজনীগন্ধার মালা। চোখদুটি বন্ধ,তুলসি পাতা দেওয়া,গায়ে সাদা চাদর ঢাকা।বাবা চলে গেলো।
এইসব ঘটনা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে।মন্দিরার হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো।ও বলল-“কি গো কী ভাবছো?”আমি এক বুক চাপা বেদনা নিয়ে মন্দিরাকে বললাম-“আমি বাবাকে ভুল বুঝে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে ঋণশোধ করেছিলাম।আর বাবা তার মৃত্যুর সময় আমার ঘাড়ে বাঁশের দোলায় চড়ে গেলো না।মুখাগ্নিও করতে পারলাম না।বাবা যে আমাকে প্রতিঋণ সুদ সমেত শোধ করে দিলো গো”।
কলমে চারুলতা রায়চৌধুরী, নোনা চন্দনপুকুর, বারাকপুর
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941