Photo : fabulouslifeforyou
শরতের আগমনী ছোঁয়া আর তার ওপর অফিস ফেরত ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে হঠাৎ লটারি পাওয়ার মতো একক জানালা সিট পেয়ে নিজেকে খুব উৎফুল্ল লাগছিল। আকাশে মেঘের রংবাজি আর সূর্যাস্তের রঙ ছড়ানো মাদকতা পরিবেশ মনের মধ্যে এমন আলোরণ তুলেছিল যে,যে কখন আমার স্টেশন এসে গেছে খেয়ালই করিনি।
তড় বড় করে নামতে যাবো কি,হকার দের ঠাসা ভিড়ে কোণঠাসা আমি ! যখন নামলাম দেখি সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের হুইসেল বেজে গেল ।ঝাল মুড়ি দাদা, সিঙ্গাড়া কাকু,বিরক্ত মুখে বললেন,”ইশ আরেকটু যদি দাঁড়াতো মাল গুলো বিক্রি হয়ে যেত” শুনতে শুনতে সিমেন্টের চেয়ারে ব্যাগটা রেখে চাবি বার করতে যেতেই ,কানে এলো একটি বাচ্ছামেয়ের গলা! কি যেন একটা বলে যাচ্ছে বেশ কয়েকবার ধরে !
কোথা থেকে বলছে উঁকি মারতেই দেখি বাবার আড়ালে এক মাথা কোঁচকানো চুলের মিষ্টি মেয়েটা। কিন্তু কি যে বলছে সে, বার কতক ধরে তিন শব্দের ঘূর্ণমান! শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে একটু ধীরে চলো নীতিতে হালকা দাঁড়ালাম।যেই আবার শুনতে পেয়েছি আধো বুলির কথা, মাথাটা গরম হয়ে গেল জানেন। শুনবেন কি আপনারা?
আরে ও বলছে চিপসের প্যাকেট নেবে আর ওর বাবা কিনে দিতে চাইছি ঝাল মুড়ি। কিন্তু তাই বলে ওই টুকু বাচ্ছা মেয়ে, যে কিনা বলবে ” বাবা নামের কলঙ্ক! ” বাবাটি চুপ করে অসহায় ও লজ্জায় পাশে। চিপস না পেয়ে বাচ্ছা টা এভাবে, বিরক্ত প্রকাশ করে চলেছে! সামনের সিটে দেখি ওর মা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভাবে মেয়েকে শাসন করে যাচ্ছে।
কিন্তু সত্যি করে বলুন তো ,ওই টুকু বাচ্চা মেয়ের কি বোঝার উপলব্ধি হয়েছে, যে ও কি বড় একটা কথা বলে যাচ্ছে এত সহজভাবে? আর এখন ওকে, থামাবার আপ্রাণ চেষ্টা যাচ্ছেন অভিভাবক। বিষয় টা সামান্য নয় কিন্তু এর গভীরতা অনেক ভেতরে।
বাড়িতে যখন স্বামী স্ত্রীর কোনো ব্যাপারে ঝগড়া,মনোমালিন্য,তর্ক চলে ,আমরা কিন্তু ভুলে যাই, পাশে বাচ্ছা আছে বা কাজের মেয়ে বা নিদেন পক্ষে পাশের বাড়ির দেওয়ালের কান।আর বর্তমানে ছোট এক চিলতে ভাড়া বা ফ্লাট বাড়িতে প্রাইভেসি রক্ষা করা যায় না এটা আমরা জানি,তবু এটা সচেতন থাকা সত্যি খুব দরকার। কোনো সময়ে সে হয়তো এই ডায়ালগ টা মায়ের রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে তার বাবার উদ্দেশ্যে শুনতে দেখেছে বা প্রায়ই শোনে।মায়ের চোখের জলও হয়তো সে এটা মায়ের বলার সময়ে নজর রেখেছিল।তাই আজও এত্ত লোকের সামনে তার সাবলীল এই বুলি যে কতটা গভীর তা বোঝা ওই একরত্তির পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়।
যে বিকাল শুরু হয়েছিল রঙিন প্রজাপতি দেখা প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে,বিকালের সন্ধ্যা আর এমন পরিস্থিতি মন টা কে খিঁচড়ে দিলো । এক বিরাট আফসোস রয়ে গেল মনের মধ্যে যে,আমরা কি আগামী কে রেখে যাচ্ছি এই সব দুধের শিশুদের কাছে। এরপর সে যখন আর একটু বড় হবে সে তো বাবাকে পরোয়াই করবে না! উল্টোটাও হতে পারে।
আজকাল বাচ্ছা দের হাতে যেভাবে নেট সহ ইউটিউবের চ্যানেল খোলা ,তারা ইচ্ছেমত দেখছে,শুনছে আর সেইমতো ধারণাও পোষণ করছে ।আর ফল হিসাবে সমাজ উপহার পাচ্ছে শিশু কিশোর অপরাধ প্রবণতাদের।তাই সমাজের শ্রেষ্ঠ উন্নত জীব হিসাবে আমাদেরও কিছু করণীয়।নিজেদের আচরন সমূহের ওপর একটু লাগাম টানা ভবিষ্যতেরই স্বার্থে।
—রাণা চ্যাটার্জী

পরিচিতি: ছোটবেলা থেকেই কবিতা,ছড়া, সৃজনশীলতার ওপর আত্মিক টান বর্ধমান শহর নিবাসী রাণা চ্যাটার্জীর।প্রতিভা,সারল্যের মেলবন্ধন ও অনুভূতিপ্রবণতায় অবিরাম সৃষ্টি করে চলেছেন কবিতা,ছোটগল্প,বাচ্ছাদের জন্য ছড়া, নিবন্ধ,কার্টুন। নক্ষত্রানি সম্মান,কবির “মেঘ বালিকা তোমায়”,”ছন্দ ছড়ায় জীবন” কাব্যগ্রন্থ ও নিয়মিত পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশ রাণা চ্যাটার্জী’র আগামী উজ্জ্বল করুক।
লেখকের আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন "পুজোর-গন্ধ" "দুর্ভোগের-লুপ-লাইন" "বনধ-অবরোধ" "পরকীয়া" "শ্রীমতির গল্প" "অথঃ-যাত্রী-কথা"
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941