Photo : Wall Street Journal
রিমার সাথে রাহুলের পরিচয় হয় ভার্সিটির ১ম বর্ষে। একটা গ্রুপ প্রেজেন্টেশন করতে গিয়েই মূলত তাদের পরিচয়।এই পরিচয় থেকেই তাদের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ত গড়ে ওঠে।রাহুল রিমাকে মনে মনে পছন্দ করত কিন্তু সাহস করে বলতে পারত না।এভাবে এক বছর অতিবাহিত হল এর মধ্যে অনেকবার সে রিমাকে তার মনের কথাটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বলে উঠা হয়নি।একদিন কেন্টিনে বসে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ করে রাহুল রিমাকে প্রোপোজ করে বসল।রিমা তাৎক্ষনাৎ কিছুই বলল না শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।রাহুলও ছেড়ে দেয়ার পাএ নয় রাতে ফোন করে সে রিমার মতামত জানতে চাইল।রিমা ইনিয়ে বিনিয়ে হ্যা বলে দিল।
এভাবে চার বছর প্রেম করার পর অবশেষে পারিবারিক সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হয়।যদিও প্রথম দিকে রিমার পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি।বিয়ের পর রাহুল একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি নেয়।যা বেতন পায় তা দিয়ে দু’জনের সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলতে থাকে।
রাহুল লক্ষ করল গত কয়েকদিন ধরে রিমার শরীরটা বেশ ভালো যাচ্ছেনা।রাতেরবেলা প্রায়ই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা উঠত কিন্তু বিষয়টা তাকে বুঝতে দিত না।রাহুল জিজ্ঞেস করলে বলত এ তেমন কিছু এমনিতেই সেরে যাবে।একদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে প্রায় জোর করেই সে রিমাকে হাসপাতাল নিয়ে গেল।ডাক্তার রিমাকে দেখার পর কয়েকটি টেস্ট দিল এবং রিপোর্ট নিয়ে দুই দিন পর দেখা করতে বলল।
রাহুল দুই দিন পর রিপোর্টগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।রিপোর্টগুলো দেখার পর ডাক্তার অনেকক্ষন চুপ করে বসে থাকল।কিছুক্ষন পর ডাক্তার আস্তে করে বলে উঠল রাহুল সাহেব আপনার স্ত্রীর ব্রেন টিউমার হয়েছে,উনি লাস্ট স্টেজে আছেন।বড়জোর আর ১ মাস বাঁচবেন।একথা শোনার পর রাহুল একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল,তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।সে ডাক্তারকে হাতজোড় করে বলে উঠল,স্যার যেভাবেই হোক আপনি রিমাকে বাঁচান যত টাকা লাগে আমি ব্যবস্থা করবো।ডাক্তার রাহুলের হাত ধরে বলল,দেখুন রাহুল সাহেব এই অবস্থায় আপনার স্ত্রীর অপারেশন করা সম্ভব নয়।কারন অপারেশন করলেও তিনি বাঁচবেন না।এর চাইতে ভালো হয় সৃষ্টিকর্তাকে ঢাকুন।
রাহুল বাসায় আসার পর রিমা জিজ্ঞেস করল রিপোর্টে কি আসছে?রাহুল বলল তেমন কিছুনা,ডাক্তার বলল এক মাস বিশ্রাম নিলেই ভালো হয়ে যাবে।এ কথা বলতে গিয়ে রাহুলের গলাটা যেন ধরে এলো।রিমা সাথে সাথেই বলে উঠল,দেখেছ আমি বলেছিলাম না তেমন কিছু হয় নাই শুধু শুধু চিন্তা কর।
এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল।রাহুলও চাকরিটা ছেড়ে দিল সে ভাবল এই কয়েকটা দিন রিমার সাথেই কাটাবে।রিমা অবশ্য বেশ কয়েকবার চাকরি ছাড়ার কারন জানতে চাইল,রাহুল বারবারই বলত আরেকটা ভালো কোম্পানি থেকে অফার পেয়েছি বেতনও আগের চেয়ে বেশি দেবে,তাই এটা ছেড়ে দিয়েছি।একদিন রিমা রাহুলের হাত ধরে বলে উঠলো তোমাকে একটা গোপন কথা বলতে চাই,কথা দাও কাউকে বলবেনা।রাহুল জিজ্ঞেস করল কি কথা? বল।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রিমা বলল থাক আগামীকাল বলবো।
ঐদিন মধ্যরাতে রিমার মাথা ব্যাথা প্রচন্ড বেড়ে গেল।রাহুল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু রিমা কিছুতেই রাজি হলনা।হঠাৎ রিমা রাহুলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। হয়তো এটাই ছিল রিমার মুখ থেকে বের হওয়া শেষ কথা।রাহুলও রিমাকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে লাগল।
লেখক পরিচিতি : মাহাদী হাছান,বাংলাদেশ,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বয়স–২৩ বছর
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941