“লিখতে বসেছি মানুষের রহস্যময় মনের কথা, মনের আনন্দে তাই কলম চলেছে তথা“
গোড়ার কথা :
বাংলা শব্দ ভান্ডারে ‘রহস্য ‘ কিংবা ইংরেজিতে ‘mystery ‘ কথাটা যেন একটু অন্যরকম। যখনই আমরা কোন রহস্যের গল্প বই পড়ি বা অন্য কারোর কাছ থেকে কোন রহস্যের ব্যাপারে শুনি তখন আমাদের একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। আবার রাস্তাঘাটেও রহস্য কথাটা শুনলে কানটা যেন একটু খাড়া হয়ে ওঠে ।অর্থাৎ রহস্য শব্দটার অনুভূতিটাই আলাদা ।রহস্য বলতে শুধুমাত্র ভয় বোঝায় না আবার আনন্দও বোঝায় না ;ভয় ,আনন্দ ,উত্তেজনা আর না জানার অনুভূতির মিশ্রণই রহস্য। অবশ্য রহস্যের সঠিক সংজ্ঞাটা যে কি তা আমরা কেউই জানিনা ।
দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা আজও আমাদের কাছে রহস্য ।ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত ,বিদ্যুতের ঝলকানি এই সবকিছুতেই রহস্য আছে। হ্যাঁ এটা বলা যায় যে ভূমিকম্প থেকে বিদ্যুতের ঝলকানি এসব কিছুর পেছনের বৈজ্ঞানিক কারণ আমরা জানি কিন্তু যদি সত্যিই সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বুঝতাম তবে এই সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো নাকি ! যদি রোধ করা সম্ভব নাও হয় ,ভূমিকম্প যে কখন কোনখানে ঘটবে তা কি আমরা জানি ?তাহলে এগুলো কি রহস্য নয় ;অর্থাৎ যা কিছুর উত্তর আমরা জানিনা তাইতো রহস্য ।
তাই প্রতিদিন আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আজও রহস্যময়। কিছুটা রহস্যের উত্তর হয়তো বিজ্ঞান জানে কিন্তু সম্পূর্ণটা নয় ।ঠিক তেমনি এমন একটা রহস্য আছে যা সম্পূর্ণ নিজস্ব কিন্তু বিজ্ঞান এই রহস্যের উত্তর এখনো জানেনা। চলো দেখা যাক আজ যে রহস্যের ব্যাপারে বলব সেটা ঠিক কি রকম ।
রহস্যের বিষয়বস্তু :
মন নামক এই বিশাল সমুদ্রটা কিছুটা অন্যরকম। এই ‘মন‘কে বোঝার চেষ্টাই বৃথা ।সময়ের স্রোতে মনের সমুদ্রও যেন পরিবর্তন আসে । তাই আজকের বিষয়বস্তু যে ‘মন রহস্য‘ বা ‘ রহস্যময় মন ‘তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
মনের রহস্যটা কি :
পৃথিবীতে যত মানুষ আছে ঠিক তত মন আছে আর প্রত্যেকটি মনে হাজারো হাজারো রহস্য আছে ।তাই মনের যে কত রহস্য আছে তা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না ।তবে প্রত্যেকটি মনে কিছু একইরকম বৈশিষ্ট্য আছে যার জন্য আমাদের নিজেদের মনটাই আমাদের কাছে বড় রহস্য ।দেখা যাক মনের সেই রহস্য গুলো ঠিক কী কী—–
1) আমাদের মনটা আসলে কোথায় অবস্থিত ?
হাতে ,পায়ে ,মাথায় ,বুকে ,কপালে কোথাও কি আমরা আমাদের মনের অস্তিত্ব বুঝতে পারি?
না ,তাইতো !
তোমরা বলবে সুখ–দুঃখের মত মনও অদৃশ্য যাকে দেখা যায় না ,কেবল অনুভব করা যায়। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে –যেকোন ব্যক্তিই তার বেশিরভাগ সময় মনের সঙ্গে কাটায় যার শুধু অনুভূতি আছে মাত্র কিন্তু কোনো অবস্থান নেই ! মানুষ কি এতই বোকা একটা অনুভুতির উপর বিশ্বাস করবে তাহলে এই অনুভূতিটা নিজেই কী একটা রহস্য নয়?
2) আমরা নাকি আমাদের মন ?
আমরা আর আমাদের মনটা কি একই ?
নাকি আমাদের কোনো অস্তিত্বই নেই ,আমাদের মনটাই আসল ?যে মনটা এই শরীর নামক যন্ত্রটায় থাকে এবং এই যন্ত্রটাকে কাজ এলাকায় মাত্র ।
3) মন না মস্তিষ্ক কে বড়?
এখন বিজ্ঞানের ভাষায় বললে আমাদের শরীরের নড়াচড়া থেকে খাওয়া–দাওয়া সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মষ্তিষ্ক। আর এই নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে স্নায়ুতন্ত্র ।এগুলো সবই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
কিন্তু মন না চাইলে মস্তিষ্ক কি আদৌ কাজ করে? যখন আমাদের কোন কাজ করার জন্য মনের ইচ্ছে থাকে না ,তখন কি আমরা সেই কাজটা সুষ্ঠুভাবে করতে পারি ?
যেমন একটা বাস্তব উদাহরণ দিই, যখন আমাদের পড়ার জন্য মনের ইচ্ছে থাকে না তখন কি আমাদের পড়াটা আদৌ হয় ?অথচ আমাদের মস্তিষ্ক প্রত্যেকটা বর্ণ চেনে অর্থাৎ আমরা পড়তে জানি কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের পড়ায় মন বসে না ।অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে মনের ইচ্ছা _অনিচ্ছার উপর ।তাহলে মন কি মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণকর্তা নয়?
4) হাসি–কান্না, সুখ–দুঃখ আমাদের মুখের ওপর সামরিক একটা প্রভাব ফেলে কিন্তু আমাদের মন শুধুমাত্র আমাদের মুখের ওপর নয় সারা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু কেন ?
5) আমাদের সকলের ক্ষেত্রেই কোন একসময় মন যেমন থাকে কিছুক্ষণ পরেই তার আমূল পরিবর্তন হয় ।তাহলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মনের পরিবর্তন কী রহস্য নয়?
6) আমাদের প্রায় সকলের কাছেই বাবা–মা –ই সবার আগে। কিন্তু আমরা আমাদের বাবা–মার মনের ভাবনাটা হয়তো বুঝতে পারি কিন্তু তাদের মনটা কি আমরা অনুভব করতে পারি? উত্তর এটাই যে পারিনা ,অর্থাৎ আমরা কেউই অন্য কারো মন অনুভব করতে পারিনা আর অনুভব করতে পারি না বলেই আমাদের পাশে বসা হাসিখুশি ব্যক্তিটি যে সত্যিই হাসিখুশি না অবসাদগ্রস্ত তাও বুঝতে পারিনা।
7) রাত্রে যখন আমরা সম্পূর্ণভাবে ঘুমিয়ে যাই তখন আমাদের সারাক্ষণের সঙ্গী ‘আমাদের মন‘ কোথায় থাকে? এটা কি রহস্য নয় !নাকি মন ঘুমিয়ে যায়? তাই যতদিন না আমরা এই অজানা তথ্যগুলো জানতে পারব মন রহস্যময়ই থাকবে।
8) যখন আমরা কোন একটা কাজে বিফল হই তখন নতুন করে কোন কাজ করার জন্য উৎসাহটা বাইরে থেকে অনেকেই দিতে পারেন কিন্তু সাহস আর জোরটা মন থেকে আসে নাকি?
9) ‘ মন ‘আর ‘মানুষের‘ পারস্পরিক সম্পর্কটা কি? অন্যান্য কোন প্রাণী বা উদ্ভিদের কি মন নেই? এই উত্তর নাজানা প্রশ্নগুলো আজও আমাদের কাছে রহস্য ।
10) একটা যন্ত্রনা এবং একটা শুধু মানুষের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য ‘মন‘ নয় কি ?কেন আমরা মনের অনুভূতি যন্ত্র মানবে তৈরি করতে পারি না! অর্থাৎ‘ রহস্য ‘ সেগুলোই যেগুলোর উত্তর বিজ্ঞান আজও দিতে পারেনি ।
মনের আরও অনেক রহস্য আছে তাই মনের যেকোন একটা রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয় ।উপরের কারণগুলো কি আমাদের আবারও মনে করায়ে না যে আমাদের মনটাই আমাদের কাছে বড় রহস্য !
শেষের কথা :
পরিশেষে তাই এটা বলাই যায় ,মন আসলে আমাদের বাস্তবিক বন্ধু ।সারাদিন আমরা বাবা–মা ,বন্ধু–বান্ধবদের সাথে যতটা না কথা বলি তার থেকেও বেশি কথা বলি মনের সঙ্গে ।তাই যতদিন কোন ব্যাক্তি পৃথিবীতে বেঁচে থাকে ততদিন এই রহস্যময় মনের সঙ্গেই বেঁচে থাকে ।অর্থাৎ,
‘ মানুষের মন রহস্যে ভরা ,
আজও সেই রহস্যের সমাধান গেল না করা ।‘
আমরা আমাদের মনকে যতটুকু বুঝি, মনটা কিন্তু তারচেয়েও আরো গভীর । অর্থাৎ আমরা সমাজে যতই প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি হই না কেন, নিজের মনের কাছে নিতান্তই শিশু ।এপ্রসঙ্গে স্যার আইজ্যাক নিউটনের বক্তব্য এক বক্তব্য আছে :
“I do not know what I may appear to the world, but to myself I seem to have been only like a boy playing on the seashore and diverting myself in now and then finding a smoother pebble or a prettier shell than ordinary ,whilst the great ocean of truth lay all undiscovered before me.”
__Isaac Newton.
পৃথিবীতে অন্যান্য বড় রহস্যের থেকেও আমাদের মন তাই বেশি রহস্যময় ।আমাদের মনে রহস্য আছে বলেই আমরা নতুন কিছু জানতে চেষ্টা করি, অন্য কোন মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করি ।যদি আমাদের প্রত্যেকের মনে রহস্যই না থাকতো তবে হয়তো বিজ্ঞানের উৎপত্তিই হতো না !আমাদের” মন” রহস্য উন্মোচনের জন্যই বিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ বিজ্ঞান আর মনের রহস্যও যেন কোথাও না কোথাও একই জায়গায় মিশে।
অতীতেও প্রত্যেক মানুষের মনের রহস্য ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ।হয়তো আমরা কিছুটা রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছি কিছুটা ভবিষ্যতে পারব কিন্তু তাতেও মন রহস্যময়ই থাকবে ।তাই বলা যায় :
” বিচিত্র এই জগৎখানা,
তাই মানুষের রহস্যময় মন আজও অজানা।”
Lekhata annorokom…pore bhalo lagloo