রাবীন্দ্রিক বিকৃতি

0
707
বেঁচে থাকলে আজ তোমার বয়স হত একশো উনষাট বছর।
তুমি তো বেঁচে আছো তোমার মতই
তোমার অমর অক্ষয় সৃজনে সৃষ্টিতে।
অথচ আমরা বারবার পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণে
ফুল ধূপ চন্দন মালা দিয়ে
প্রমান করার চেষ্টা করি
তুমি এখন আর আমাদের মধ্যে নেই
তুমি আমাদের মত রক্ত মাংসের মানুষ নও।
তুমি এখন শুধুই মূর্তি।
তুমি শুধুই ঠাকুর
যাকে চোখে না দেখে
না জেনে না শুনে না বুঝেও
জোড় হাতে প্রণাম করা যায়
আর প্রমান করা যায় নিজেকে
একনিষ্ঠ রবীন্দ্র ভক্ত বলে।

আমি তোমার স্ববিজ্ঞাপিত ভক্ত নই।
আবার রক্ত মাংসের মানুষ রূপে
তোমাকে উপলব্ধি করার মত
প্রগাঢ় রাবীন্দ্রিক জ্ঞানও অর্জন করা হয়ে উঠেনি
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের সংকীর্ণ পরিসরে।
আমি তোমার বৃত্তের মহাকর্ষীয় আকর্ষনের বাইরে।
তোমার অতলস্পর্শী সিন্ধুতে
অবগাহন করা হয়ে ওঠেনি
আমারই দৈন্যতা আমারই দ্বিধা ভীরুতায়।
আমি বঞ্চিত তোমার স্মৃতি ও প্রীতি সুধায়।

তোমাকে কতটুকুই বা জানি।
তবুও তোমার জরিপ করে চলি আমরা
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত।
তোমাকে না জেনেই কেউ কেউ সদর্পে ঘোষনা করেন–
“রবীন্দ্রনাথ আমার আদর্শ।
আমার মাটি রবীন্দ্রনাথের মাটি।
রবীন্দ্রনাথকে সকলে মেনে চলুন।”
কেউ আবার তোমারই উক্তিকে বিকৃত করে
কথায় কথায় তোমাকে উপস্হাপন করে
প্রকৃষ্টতম উদাহরণ হিসেবে।
ফলকে ফলকে স্বরে তারস্বরে বিপননে বিকারে
তোমাকে কেউ কেউ করে পন্য
সবই নাকি তোমার প্রচারে
তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

সত্যিই তুমি আজ বেঁচে নেই।
তুমি মৃত।
পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণে
তোমাকে তাই আলাদা করে মনে করতে হয়।
মনে রাখতে হয় সড়ক কিংবা ভবনের নামাঙ্কনে।
তোমাকে আমরা এই ভাবেই মনে রাখি।
ভুলে যাই শুধু তোমার শেখানো সহজ পাঠ
তোমার দেখানো পাচমুড়া পাহাড় শ্যামলী নদী।
ভুলে যাই জীবনের গাঢ়তম অন্ধকারে
তোমার সৃজন উৎসারিত আলোকের ঝর্ণাধারা।
ভুলে যাই শান্তির ললিত বাণী।
ভুলে যাই সমস্ত ছেদ বিভেদ ভেদাভেদ ভুলে
সমগ্র বিশ্বব্যাপী এক শান্তিনিকেতন স্হাপনের মহান আদর্শকে।

আজ মনে হয় বড়ো ভুল সময়ে জন্মেছিলে তুমি
বড়ো ছোটো ছিল তোমার জগৎ
অতি সামান্য ছিল তোমার রসদ।
তবুও কি অসামান্য অপরিমেয় তোমার উৎপাদন!
এক জন্মে কেন
শত শত জন্মেও তোমাকে শেষ করা আমার সাধ্য নয়।
তবুও মনে হয় বড়ো ভুল সময়ে জন্মেছিলে তুমি।

তুমি যদি জন্ম নিতে এই এক বিংশ শতকে
তবে উপলব্ধি করতে পারতে
এই পৃথিবী কত বড় অথচ কত ছোটো
কত উদার অথচ কত নির্মম
কত আধুনিক অথচ কত গোঁড়া
দেখতে পেতে তোমার সাধের
শষ্য শ্যামলা এই বসুধা কত উর্বর
অথচ ভিতরে ভিতরে সে কত রুক্ষ।

তুমি যদি এই শতকে জন্মাতে
দেখতে কি আশ্চর্যজনক ভাবে মানুষ বেঁচে আছে
দেখতে পেতে মহামারীতে পৃথিবীটা একেবারে শুয়ে পড়ার পরও
কি ভাবে নতুন করে উঠে
দাঁড়ানোর দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখে।
তুমি অবাক হতে কিছু মানুষের মহামানবীয়
অহঙ্কার আর দম্ভ দেখে
আর বেশীরভাগ মানুষের অতিমানবীয় সংগ্রামে।

এখন পৃথিবী অনেক বড়।
মানুষও অনেক বেশী
লোভ লালসা নির্মমতা চাওয়া পাওয়া
আশা নিরাশাও তার গুনানুপাতিক।
তোমার জন্য এখন অনেক রসদ।
এখন তুমি থাকলে
লিখতেও পারতে অনেক বেশী।
শুধু বিশ্ব নয় হয়তো দখল করতে পারতে মহাবিশ্বকেও।
পেতে অনেক সমাদর অনেক সম্মান অনেক স্বীকৃতি।
তবে প্রশ্ন জাগে মনে—
কি করে সইতে তুমি
নিজের এই বিদগ্ধ বিকৃতি?

Poet Krishna Barman

কবি পরিচিতি : কৃষ্ণ বর্মন

SOURCEকৃষ্ণ বর্মন
Previous articleমহাকালের পথিক
Next articleকবিগুরু
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here