শিশুশ্রম

মায়ের কোলে থাকার কথা
খেলবে খেলা তিন সাঝ,
তা না তারা পথে পথে
করছে যে ভারি কাজ।

কেনো তারা খাটবে বলো
গরীব কি অপরাধ,
কত কষ্ট করে তারা
নেই একটু হাসার স্বাধ।

ঝালাই কাজে ঢালাই কাজে
কিংবা মাঠে ঘাটে
করছে শিশু ঝুঁকির যে কাজ
দেখে বুকটা ফাঁটে।

জন্ম থেকে খাটছে শিশু
নেই তাদের অধিকার,
কত গুণী গলা ফাঁটায়
নেই না কেউ তাদের ভার।

মালিক শ্রমিক

বড় বড় দালান উঠে
আমার শ্রমের ঘামে,
আমার কাজের মূল্য নেহাত
এই যে নিষ্ঠুর ধামে।

তুমি মালিক আমি শ্রমিক
তুমি রাজা বটে,
তোমার খেয়াল হেয়াল কাণ্ডে
ভাগ্যে দুর্ভোগ ঘটে।

তোমার কলম গলা কাটে
লেগে থাকি শ্রমে,
দুটো টাকা দাও না বেশি
বাড়ো তুমি ক্রমে।

তোমার ভিত্তি আমি গড়ি
চাও না আমার দিকে,
তোমার জীবন রঙিন করি
আমরা হয়ে ফিকে।

বিপন্ন শ্রম জীবন

শ্রমিক এখন কর্মহারা
হাতে হয় না আর কাজ,
মেশিন এখন কর্ম করে
মেশিন রাজাধিরাজ।

একটি মেশিন করে এখন
হাজার শ্রমিকের কাজ,
হাজার শ্রমিক বেকার বসে
করবে কি তারা আজ?

কাজ হারিয়ে শ্রমিকরা আজ
পথে পথে হাটে,
পেটের দায়ে বিভোর ঘোরে
হৃদয়টা তাই ফাঁটে।

কর্মদক্ষ হাতের গুণে
হতো পণ্য উৎপন্ন,
প্রযুক্তি এসে গ্রাস করলো
জীবন এখন বিপন্ন।

শ্রমিকের খেদ

থাকো তুমি সাততলাতে
চিনবে না ধূল-মাটি,
সুখ তোমাদের করতলে
তোমরা আসল খাঁটি।

উজ্জ্বল আলোয় থাকো তোমরা
চিনবে না কূপ-আলো,
স্বর্গ সুখে বসত করো
সব তোমাদের ভালো।

টাকায় হাতদ্বয় থাকে ভরা
বুঝবে না হাত-কড়া,
শীতাতপে থাকো তোমরা
আমরা পুড়ে মড়া।

অট্টালিকা বসে তোমরা
দাম বাড়াও সারের,
অট্টালিকা বসে তোমরা
দাম কমাও পণ্যের।

হে ধনী স্যার, রাগ করবেন না
বলছি বাড়িয়ে আগ,
তোমার ধনে আমার রক্ত
আমার তাতে আছে ভাগ।

সংসারে নারীশ্রম

ঘরের মাঝে নারীর কাজের
মেলেনি স্বীকৃতি,
তাদের কাজকে তুচ্ছ ভাবি
মনটা যে বিকৃতি।

তাদের শ্রমে অর্থ হয় না
তাই বলি কি করো,
দিনে রাতে কর্ম করেও
কেঁদে কেঁদে জ্বরো।

স্বামী বলে রেগে মেগে
রোজগার করো অল্প,
ছেলে বলে হেসে হেসে
করো ভরদিন গল্প।

নারীর কাজ চোখে পড়ে না
এটাই পুরুষের চোখ,
পাঁচদিন কর্ত্রীর অসুখ থাকলে
সংসার হবে দোজখ।

ব্যাগার খাটা

নিজের কাজ করে পারি না
হয় না শখে হাটা,
আবার করতে হয় পরের কাজ
কষ্ট ব্যাগার খাটা।

সূর্য ডুবে উঠে চন্দ্র
কাজে ডুবে থাকি,
নিজের কাজে দরদ বেশি
দিলে হয় না ফাঁকি।

নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলে
পরে ডাকে মাঝে,
পরের কাজ আগে করতে হয়
লাগে বড্ড বাজে।

নিজে কাজে রফা দিয়ে
ফিরি দুলি হেলে,
পরে ডাকে ব্যাগার দিতে
বিশ্রাম নিতে গেলে।

নিজের কাজে পাই না কাউকে
কাজ দেয় না কেউ ধরে,
পরের হাতের কাজ করে দেই
জীবন পরের তরে।

নিজের কাজে কাউকে ডাকতে
লজ্জা আমার লাগে,
মানুষ কোন বিবেকে ডাকে
ক্ষুব্ধ হই তাই রাগে।

নিজের কর্ম অন্যের ঘাড়ে
দিলে জাগবে ভ্রান্তি,
নিজের কর্ম নিজে করলে
জাগবে মনে শান্তি।

নিজের কর্ম নিজে করলে
তৃপ্তি তাতে থাকে,
নিজের কর্ম অন্যের দিয়ে
করলে পড়বে পাঁকে।

পরিশ্রম

কত কষ্টের প্রসব বেদন
বলে বোঝানো দায়,
তার ফলে যে ফলটা আসে
বড্ড মিঠে তো ভাই।

শান্তি আসে সিদ্ধি লাভে
দেহ তো হয় নষ্ট,
শ্রমের ভয়ে কাজ না করলে
বাড়বে দুর্ভোগ কষ্ট।

ঘাম না ঝরে ফলটা পেলে
হয় না তা স্থায়ী,
ফল ফলবে হলে সংযমী
নয় তো থাকবে দায়ী।

চাইলেই তো আর যায় না হওয়া
নারীর কাখের কলস,
কাজের মাঝে হও সহিষ্ণু
হয়ো নাকো অলস।

কৃষকের জীবন

মাঠে থাকে মাঠে খাটে
ভেজে বৃষ্টির জলে,
কত কষ্ট করে কৃষক
তারপর ফসল ফলে।

স্বপ্ন জাগে ফসল দেখে
ফসল উঠে বেড়ে,
ভাগ্য মন্দ হলে বন্যা
ফসল নেবে কেড়ে।

আকাশ থাকে নাখোশ হয়ে
তেঁতে উঠে ধরা,
সাধের ফসল বাড়ে না আর
নেমে আসে খরা।

সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি
রোদে পুড়ে মরে,
হাজার ধকল সামলে নিয়ে
ফসল আনে ঘরে।

ফসল উঠে কৃষক হাসে
কেউবা ভরে গোলা,
ফসল দেখে ব্যথা সারে
সারে হাতের ঠোলা।

কেউবা দায়ে বিক্রি করে
শুকায়নি গায়ের ঘাম,
সোনার ফসল বেচতে মায়া
পায়নি বাজারে দাম।

আবার কৃষক পূর্ণোদমে
ক্ষেতে ফসল বোনে,
ক্ষেতের ফসল বাড়ে ঋণে
হাসে মহাজনে।

ক্ষেতের ফসল খায় যে পরে
কী লাভ আছে চাষে,
অকৃষকরা লুফে নেয় সব
কৃষক কেবল ফাঁসে।

শ্রমিকের জীবন

আমরা শ্রমিক ভুক্তভোগী
হই শোষণের শিকার,
অবহেলায় জোটে কেবল
দেয় না কেউ অধিকার।

দেয় না কেউ যথাচিত সম্মান
জোটে অপমান, ভাই,
ন্যায্য মজুরি দেয় না কেউ
টাই পরা স্যার ঠকায়।

আমার ঘামে তোমার বাড়ি
দাও না ঘামের দাম,
যাঁতাকলে পিষ্ঠে মারো
চোখে তোমার নেই চাম।

তোমার কাজে জীবন বাজি
হাতে জমে কড়ে,
তুমি ঠকাও, ঠকতে ঠকতে
নিম্নে থাকি পড়ে।

বিরতিহীন শ্রম

এখন আর কেউ করে না কাজ
ঘণ্টা মেপে মেপে,
দিন শেষে রাতেও করে কাজ
শুনলে যাবে কেঁপে।

ওভারটাইমে করে কাজ
দরকার শুধু টাকা,
কাজ না করলে টাকা বিনে
থেমে যাবে চাকা।

প্রাণপণ লিপ্ত কাজে সবাই
অবসর নেই না কেউ,
ভ্রমণটুকুও ভুলে গেছে
রুখতে খরচের ঢেউ।

জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে
না কাজ করলে মারা,
ব্যয়ের সাথে যায় না পারা
জীবন বিশ্রাম হারা।

কলমে সৌমেন দেবনাথ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

SOURCEকলমে সৌমেন দেবনাথ
Previous articleমুখোশ
Next articleবসন্ত তৃষ্ণা
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here