এক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা ,এ এক চরম দুর্দিন অবস্থা যেন।এক একটা পরিবারের মতো,এক একটা দেশ, পাশাপাশি ,রেষারেষির অবস্থানে রত। কলোনিতে যেমন সব পরিবারের মধ্যে সখ্যতা থাকেনা ,কিছু পরিবারের মধ্যে ঐ মুখের হাসিটুকুর বিনিময় দেখে গা সওয়া আমরা ।আবার কিছু পরিবার কেবল স্বার্থের সম্পর্কে নির্ভরশীল হয়ে চুপচাপ অবস্থান করে। সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ ভাবেও কিছু পরিবার চেষ্টা করে মানব বন্ধন তৈরি করে সামগ্রিক উন্নতিতে দিশা দেখিয়ে অন্যান্যদের সামিল করতে।এই রকমই একটু বৃহৎ পরিসরে তেমনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কখনো ঐক্য কখনও “দেখ কেমন লাগে”গোছের হামবড়াই একটা ভাব। আমিই সেরা হবার এক প্রতিযোগিতা,সামরিক যুদ্ধ বিমান,সেরা সম্ভার ক্রয়ের মধ্য দিয়ে যতটা না প্রয়োগের প্রয়োজন,এসব প্রকাশে অন্যের সমীহ আদায় জরুরি। তাতে মাঝে মাঝে রুদ্র রূপ দেখানোর প্রয়োজন পড়লে তো আছেই সে ব্যবস্থা,দোসর কোনো জঙ্গি সংগঠনের পিঠ চাপড়ে দেওয়া আর তাতেই কিনা কেল্লাফতে!দুঃখ জনক উদ্বিগ্নতার চিন্তাগ্রস্ত মুখে আমি তো কিছু করিনি,যা হয়েছে ভীষণ খারাপ ইত্যাদি গোছের কূটনৈতিক দৌত্য। মাঝে দেশকে মাতৃ রূপে রক্ষা করার মহান ব্রত নেওয়া স্বপ্ন সন্ধানী বীর জওয়ানদের আত্ম বলিদান,এভাবে অতর্কিতে কাপুরুষচিতো হামলায় মুখ থুবড়ে পড়া খুব কষ্টের মেনে নেওয়া যায় না। ভিড় বাজারে এক এক্স আর্মির সাথে আমার এক পরিচিতার এই নিয়ে কথা হচ্ছিল।কথা প্রসঙ্গে অফিসার জানালেন,”এক থালা ভাত নিয়ে খেতে বসলে ,দু চারটে ভাত তো থালার বাইরে পড়বেই”-কি আশ্চর্য্য উচ্চ মার্গের ধারণা ও মনোবল দেখে অবাক বিস্ময়ে বলতে ইচ্ছা হয়,সেনাবাহিনী তোমায় কুর্নিশ।
গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ,প্রেম ভালোবাসা ,বন্ধনের বহু প্রতীক্ষিত দিন পালনের আমেজকে , বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুলওয়ামা জেলায় জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় সড়কে যে ভয়ংকর হামলার নিদর্শন হলো তা নাকি এই উপত্যকায় আগে ঘটে নি। নেট ঘাঁটা পাবলিক পরিসংখ্যান দেখে,কার দোষ ,কেন হলো, কিসের গাফিলতি এসব প্রশ্ন তুলছে আর স্বদেশ প্রেমের নির্দশন দেখাতে স্ট্যাটাস পাল্টানোতে মশগুল। দেশ জুড়ে বীর শহীদের কফিন পৌঁছে মানুষের চোখের জলে বিদায়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্তিম সংস্কারের মধ্যেই রাজৌরি সেক্টরে আর এক সেনা অফিসারের মৃত্যু ,প্রতিবেশী আর এক দেশ ইরানে জঙ্গি হামলায় সাতাশ জনের মৃত্যুর খবর ,ঘৃনায় রূপান্তরিত হয়ে বিশ্ববাসীর সামনে।এ নিন্দার কোনো ভাষা নেই,কোনো অনুনয় বিনয়ে আর কাজ নয় একমাত্র কড়া প্রতিরোধ ছাড়া। প্রায় সব হামলার ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের মদতের ইঙ্গিত প্রমান করছে পাকিস্তান নিজেদের শুধরানো তো দূর সকল জঙ্গি আক্রমন পরিকল্পনার আঁতুর ঘর হিসাবে বিশ্বের কাছে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে । যে জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদ,পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করেছে তার সুপ্রিমো মাসুদ আজহারের জঙ্গি প্রশিক্ষন সহ ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার হামলা আক্রমণের সুবিশাল কর্মকান্ড পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে সুদীর্ঘ পাঁচিল ঘেরা প্রাসাদোপম সদর দপ্তরে চার চারটি মাদ্রাসা সহ,জঙ্গি তৈরির নিরবিচ্ছিন্ন পরিকল্পনায় পাকিস্তানের মদতে আজও বহাল তবিয়তে।তাকে যখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষনার চেষ্টা চলছে ভারতের আর এক শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ চীনের বাধা আসলে বন্ধু পাকিস্তানের ই পিঠ চাপড়ে দেওয়া।
কয়েকমাস আগে মহান ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের মসনদে বসার পর বিশ্বের সকল ক্রিকেট প্রেমী,তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী আমাদের একটা যেন কোথায় আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল । উনি দীর্ঘ একুশ বছর ধরে যেভাবে ক্রিকেট দুনিয়াকে রাজ করেছিলেন, আশা ছিল হয়তো জঙ্গি সংগঠন গুলির বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়ে শান্তির বাতাবরণ বজায় রাখতে সচেষ্ট হবেন।কিন্তু পরিস্থিতি ,ওনার প্রচ্ছন্ন মদতের ছবি অচিরেই সেই পর্দা খুলে ফেলছে,পেছন থেকে এত গুলো বীর জওয়ানকে আক্রমণের মতো ঘৃণ্যতা, ভয়ের বাতাবরণে বিশ্বকে মুড়ে ফেলা এ ইসলাম ধর্মেরও পরিপন্থী।কোনো ধর্মই মানুষ কে সুপরিকল্পিত ভাবে,লুকিয়ে খুন করার শিক্ষা দেয় না,শেখায় সহনশীলতা,ভাতৃত্ব প্রেম।
যে ক্রিকেট খেলা সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে বিশ্বের নানা দেশের মধ্যে একতার মন্ত্র ছড়িয়ে অনাবিল আনন্দ দেয়,গর্বে ভরে আমরা ক্রিকেটার দের আদর্শ বলে সম্মান দেই, গলা ফাটাই আর যাই হোক তার এই রূপ ,তাঁর প্রতি বিশ্বাসে কুঠারাঘাত।যে ইমরান খান তাঁর ক্রিকেটীয় জীবনে একের পর এক সম্মান অর্জন করেছেন,পুলওয়ামারে নিন্দনীয় ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ওনার মদতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাও লজ্জিত।তাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারদের যে গ্যালারি সেখান থেকে ইমরান খানের ছবিকে ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা ব্যক্তি ইমরানের কাছে এক বড় ধাক্কা।
এই কদিনে ফেসবুক,টুইটার,নেট দুনিয়া জুড়ে স্বদেশ প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে,এই ঐক্য বদ্ধতা দেশের বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে ভীষণ জরুরী এক জেহাদের নামান্তর।কিন্তু কার গাফিলতি,কার দোষ এসব নিয়ে যে যেমন পারছে মন্তব্য দেশের সিরিয়াস বিষয় নিয়ে,এ যেন ছেলেমানুষির নামান্তরও হয়ে উঠছে। রাগ,দুঃখ,
মাথাগরম হওয়াটা অবশ্যই স্বাভাবিক এবং প্রত্যেকের নিজস্ব রাজনৈতিক মত আছে কিন্তু এই জাতীয় আঙুল তোলার পিছনে যদি ফ্যান ফলোয়ার বাড়ানো উদ্দেশ্য হয় তা সত্যিকারের দেশপ্রেম নয়। আসুন একটু ভাবি, যে মেয়েটা প্রতিদিন শুভ সকাল না বলে “জয়হিন্দ’ শব্দ প্রয়োগে বাবার সাথে বাক্য বিনিময় করতো ,যে স্ত্রী ,স্বামীর গরবে গরবিনী হয়ে অপেক্ষা করে বসে থাকে কবে তার স্বামী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাড়ি ফিরবে ছুটি কাটাতে,কিংবা যে বিধবা মা যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ছেলেকে হারিয়েও, কষ্ট বুকে চেপে ও ভারত মাতার জন্য উৎসাহিত হয়ে ছোট ছেলেকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে পিছুপা হয়না তাদের মানসিক অবস্থা কি চলছে। দেশ জুড়ে বাড়িতে পাঠানো বীর শহীদদের, কফিন স্পর্শে প্রিয় জনদের মানসিক অবস্থার প্রতি সমবেদনা জানাই।
ঘটা করে বাজেট প্রস্তুতিতে বেশি অর্থ রাখা হয় দেশের সামরিক,প্রতিরক্ষা খাতে।দেশের বিশেষ বিশেষ দিনে কুচকাওয়াজ সহযোগে সামরিক সজ্জার নিদর্শন তবু নীতির ফাঁসে সে সব ব্যবহারের অনুমতি থাকে না।কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতায় ঠুঁটো জগন্নাথের মতো দেখেই সইতে হয় আর সর্ষের মধ্যে চর হিসাবে অবস্থানকারী,মুখ মুখোশের আড়ালে থাকা চর, সব তথ্য কাঁটাতারের ওপারে সরবরাহ করে আদতে যে ডালে বসে সুবিধা নিচ্ছেন,সেই ডাল ই কেটে চলেছেন।জনতার আদালতে,বিবেকের কাঠগড়ায় একদিন না একদিন সেই সব ঘৃণ্য মানুষজন উচিত শিক্ষা পাবেন।
হামলার মদতদাতা রাষ্ট্রের অবস্থানে মৃত্যুর বর্বরতা দেখি,লুকিয়ে চুরিয়ে আক্রমণ,প্রতি আক্রমণের মহড়া কিন্তু তা আদতে আক্রমণের শিকার হওয়া শহীদের পরিবার ,আত্মীয় স্বজনদের স্বান্তনা দেবার ভাষা থাকে না।তবু স্বপ্ন দেখি শান্তি ফিরবে,অবস্থান করি আরও একটা ভোটের দামামা বাজার অপেক্ষায় ।
রাণা চ্যাটার্জী, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়, পোস্ট-শ্রীপল্লি, বর্ধমান পূর্ব