চাদরটা আলতো করে বনশ্রীর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে চন্দন বলল — ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? বাইরে যথারীতি হিম পড়ছে। — আরে তুমি ! কখন এলে, টের পেলাম না তো ! জোছনার আলো টা ভীষণ ভালো লাগছে তাই একটু দাঁড়িয়ে গেলাম— হ্যাঁ, আমি তোমায় দেখেছি কিন্তু ডাকিনি— আচ্ছা, ঝন্টে এখন তোমার এখানে কাজ করে না ? চারিদিকে কেমন আবর্জনার স্তুপ। দেখে মনে হচ্ছে কেউই যেন এখানে থাকেনা এসে দেখি বাড়ি তালা বন্ধ। ভাগ্যিস আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি টা ছিল, তা না হলে যে কি হত ! তোমাকে তিন-চার দিন ধরে ক্রমাগত ফোন করে গেলাম, টেলিফোনে কোন সাড়া শব্দ পেলাম না— ফোনটা খারাপ হয়ে গেছে। না, ঝন্টু আর কাজ করে না— আচ্ছা, গত সপ্তাহে তোমাদের এখানে কি একটা গণ্ডগোল হয়েছিল না ?— ও তুমি জানো ?— তেমন ভাবে ঠিক জানিনা। কি হয়েছিল গো ?— সে অনেক ঘটনা— বলোই না শুনি— এখানকার আদিবাসীদের ওপর প্রশাসন অনেকদিন ধরেই অত্যাচার করছিল। ওরা নিজেদের অধিকারটুকু পাচ্ছিল না। পাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসী পরিবার গুলো বড্ড অসহায়। জীবন-সংগ্রামে ভীষণভাবে পর্যুদস্ত। মাতব্বরদের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত। তাই প্রতিবাদ হিসেবে ওরা বিপ্লবের পথ বেছে নেয়। এখানকার স্থানীয় মহিলারা যারা বিপ্লবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দরকার পড়লে সেই সব মহিলারা নিজের শরীর বিক্রি করে হলেও বিপ্লবের অগ্রগতির জন্য অর্থ জোগাড় করতে পারে। আঞ্চলিক থানার একটু বদমেজাজী পুলিশ অফিসাররা জনগণের সম্মুখে সেইসব মহিলাদের ওপর শারীরিক অত্যাচার করছিল বেশ কিছুদিন ধরে যাতে ওদের মনোবল ভেঙে যায়। সেদিন সন্ধ্যেবেলায় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যখন পুলিশের গাড়ি গুলো যাচ্ছিল তখন বিপ্লবীরা অতর্কিতে আক্রমণ করে। তিনজন পুলিশ অফিসার মারা যায়। বিপ্লবী দলের সর্দারের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে— কেন যে তুমি এই ঝামেলার জায়গায় পড়ে থাকো বুঝতে পারি না বাপু। তুমিও যথেষ্ট রহস্যময়। তোমার কাজকর্ম সম্পর্কে আমি আজও কিছুই জানিনা। দিনের পর দিন, মাসের-পর-মাস শুধু অপেক্ষায় করে গেলাম। সেই ছোটবেলার প্রেম তো তাই কখনো সখনো ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারিনি। আমার যত জ্বালা— আর অপেক্ষা করতে হবে না— তাই নাকি ? ওইটা ঝন্টু না ? এই ঝন্টু এদিকে আয়, ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস ?— আরে, দিদি যে, তুমি কখন এলে ? — এইতো বিকেলবেলায়। হ্যাঁরে, তুই আর কাজ করিস না কেন রে ? দেখ চারিদিকে কত জঞ্জাল— দাদাবাবু চলে যাবার পর এখানে আর আসতে ইচ্ছা করে না— দাদাবাবু চলে যাওয়ার পর মানে ! ঐতো দাদাবাবু— কোথায় দিদি ? — আরে ঐতো তোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে— দাদাবাবু এখানে থাকবে কি করে ? গত সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে দাদাবাবুর মৃত্যু হয়েছে। খবরের কাগজে পড়োনি ?— কি আবোল তাবোল বকছিস ঝন্টু ?— কেন তুমি জানোনা , দাদাবাবুইতো বিপ্লবীদের সর্দার— কে চন্দন ? আমি তো এসবের কিছুই জানিনা রে, তাহলে এতক্ষণ আমার সাথে কথা বলছিল কে ? আর কে ই  বা  যত্ন করে চাদরটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিল !!!

কলমে নিপা রায়, শিউলী,তেলেনিপাড়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here