দিদি – অর্ক নীচে আয়… মা বকছে।আজ অমাবস্যা ভাই নীচে আয়।
বোন – দাদা নিচে চল দিদি ডাকলো শুনতে পেলি না!!
অর্ক – বস একটু। যাচ্ছি পরে…
বোন – বসবো কেন আবার? চল নীচে।
অর্ক – একটা কথা মনে পরে গেলো রে।
বোন – এই দা কি কথা রে…
অর্ক – শুনবি! ভয় পাবি না তো?
বোন – না না বল তুই….
শুনবো।
“মূল গল্প শুরু”
অর্ক – তাহলে শোন,
ঘটনাটা আজ থেকে পাঁচ বছর আগেকার।
তখন আমি কলেজে পড়ছি।
আমরা পাঁচ বন্ধু একে অপরের খুব কাছের।
অস্মি, ময়ূখ, রিক,রুমি আর আমি একদিন ঠিক করলাম কনক পুরের রাজবাড়ীতে গিয়ে রানীর সঙ্গে দেখা করবো, কিছু জানবো আর কিছু ছবি তুলে আনবো প্রজেক্টের জন্যে।
(একটু থেমে ঢোক গিলে দাদা যেই বলতে যাবে বোন ওমনি বলে উঠলো)
বোন – কিন্তু!! দাদা শুনেছি ওটা তো ভুতের বাড়ী (কাঁপা গলায় বোন জিজ্ঞাসা করলো দাদা কে)
অর্ক – আরে বাবা…. তুই তো শোনার আগেই বলে দিচ্ছিস।শোন তো আগে গল্পটা।
বোন – ঘাড় নেড়ে হুঁ হুঁ করলো আর বললো বল বল …
“মূল প্রেক্ষাপট”
অর্ক – সেদিন বিকেল 3টে 20 তে হাওড়া থেকে কনক পুর লোকালে উঠলাম।
ট্রেন — ট্রেনের শব্দ
ট্রেন ছাড়লো
[বন্ধুদের এন্ট্রি]
সবাই মিলে গান ধরলো
গানের মাঝেই তাদের মধ্যে থেকে বলে ওঠলো
আর কতক্ষন লাগবে??
রিক – আর তিরিশ মিনিট লাগবে।
যদি ট্রেন না লেট করে তাহলে।
রুমি – ঐ ময়ূখ ওখান থেকে তোর মামারবাড়ী কতো টা রে??
ময়ূখ – ঐ 20 মিনিট মতো হবে।
অস্মী- মামারবাড়ীতে বলেছিস তো??
আজ রাতে কিন্তু আমরা ওখানেই থাকবো।
ময়ূখ – হ্যাঁ রে।
মামাকে বলে রেখেছি।
রিক – চল চল next station এই নামবো।
“জায়গাটার বর্ণনা”
ঘন্টা দুয়েক বাদে ট্রেন থেকে নামলাম সবাই।
নির্জন একটা স্টেশন কনকপুর।
একটু এগিয়েই একটা ভ্যান ঠিক করে রাজবাড়ীর ঠিকানায় রওনা দিলাম।আমাদের কে রাজবাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে ভ্যান ওয়ালা চলে গেলো।
চারিদিক নিস্তব্ধ ,জনমানব শূন্য একটা পোড়ো রাজবাড়ী।ভগ্ন দেওয়ালের গা দিয়ে কিছু বট – অশ্বত্থের শাখার বিস্তারে গোধূলিতেও কেমন যেনো একটা অন্ধকার নেমে এসেছে।
রাজবাড়ীতে প্রবেশের মুহূর্তে দাড়োয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
দাড়োয়ান – তোমরা কোথায় যাবে?
রানী মার সঙ্গে দেখা করতে এসেছ??
একটা কাঁপা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো ওদের সামনে।
রিক- হ্যাঁ,আমরা রানী মার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
দাড়োয়ান – অনেক দিন বাদে কেও এলো রানী মার সঙ্গে দেখা করতে।
যাও যাও দেখা করে এসো।
ময়ূখ – আচ্ছা…. রানী মা কোন ঘরে থাকেন??
দাড়োয়ান -ভেতরে যাও। দোতলার তিন-চারটে ঘর পরেই রাণীমার শয়ন কক্ষ।ওখানেই রানীমার দেখা পাবে।
রুমি – এবার আমরা ভিতরে যায়?
দাড়োয়ান – হ্যাঁ যাও। তবে একটা কথা “আজ কিন্তু অমাবস্যা” তাড়াতাড়ি কথা বলে বাড়ি ফিরে যেও।
রাজবাড়ীতে প্রবেশ__
সবাই রাজবাড়ীর ভিতরে ঢুকলাম। ভিতরে কেমন যেন গা-ছমছমে অল্প আলোতে ঘেরা চারিদিক। একটা লম্বা ঝাকানো সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে তিন-চারটে ঘর পরেই রানীমার শয়ন কক্ষ।
হঠাৎ ওদের মধ্যে থেকে কেউ বলে উঠলো
ভিতরে আসবো রানী মা?
দেখলাম রাণীমা একটা চিয়ারে আমাদের উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছেন।এক বিধবা মহিলা।
(ভিতর থেকে শোনা গেলো অল্প বয়সী কন্ঠস্বর)
ভিতরে এসো।অনেক বছর পর আমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছে। সেই কবে ছেলেরা আমাকে একা করে চলে গেছে।
অর্ক – মনে মনে বলছে
রাণীমার কথা শুনে মনে হলো উনি বোধহয় আমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন।আমরা ভিতরে ঢুকতেই রানী মা বলে উঠলেন —
রাণীমা – তোমরা কোথা থেকে এসেছো?
রুমি – আমরা কলকাতা থেকে এসেছি রানী মা
রানী মা – তোমরা এসে ভালোই করেছো।অনেকদিন আমি একা একা এই ঘরে বসে আছি।কেউ আসে না আমার সাথে দেখা করতে।শুধু ঐ এক দাড়োয়া, সেও ওই আগের বারের বর্ষায় ম্যালেরিয়া তে মারা গেলো।তারপর আমিও …..
রানী মার কথা শুনেই সবার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। মুহূর্তেই যেন সবাই পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলাম।আমাদের সবার হাত পা পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে। কারোর মুখ থেকে কোনো কথা বেরালো না।সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।রিক অনেক কষ্টে চাপা গলায় বলে উঠলো
পা…….লা…….
এ এটা ভুতের বাড়ি……..।।
অর্ক সে তো সবটা সঞ্চালক হিসেবে বলছে তাই অর্ক বোন কে যেটা বলছে সেটা হলো।
ওর গলা শুনে স্তম্বিত ফিরলো।(রিক এর গলা শুনে)
আমরা সবাই ছুঁটে বেড়িয়ে আসবো বলে দরজার কাছে আসতেই একটা দমকা হাওয়ায় দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো।(দরজার আওয়াজ জোড়ে)
পিছন থেকে রাণীমার গলা
রানী মা – তোমরা ভয় পেয়ো না।আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না।তবে আমার কথা শুনে এখান থেকে বেড়ানো যাবে না।
“আজ কিন্তু অমাবস্যা”
পাঁচজন একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে কাঁপতে কাঁপতে রানী মার দিকে ঘুরে দেখলাম
যে চিয়ারটায় রানী মা বসে ছিলেন
সেই চিয়ারটাতেই একটা কঙ্কাল।আমাদের মুখোমুখী বসে আছে।
আমরা ভয়ে মাটিতেই বসে পরলাম।
ঘরের ভিতরে একটা বিকট হাসি খেলা করছে, হঠাৎ চমকে গিয়ে দেখি রানী মা আমাদের দিকে তাকিয়ে।
রানী মা – আমি এই কনকপুরের রানী।তোমরা ভয় পেও না।বাচ্ছা মানুষ তোমরা।আমার নাতি নাতনী এর মতন।গতবছর দাড়োয়ান মারা যাওয়ার পর আমাকে দেখভালের কেও ছিলো না।
প্রথম প্রথম ভাড়ারে যা ছিল তাই দিয়ে অনেক কষ্টে একবেলা ফুটিয়ে কয়েকদিন চালিয়ে ছিলাম।কিন্তু ভাড়ার একদিন শূন্য হলো আর আমার ক্ষমতাও সপ্তাহ খানেক না খেতে পেয়ে এই চিয়ারে বসেই আমি মরে গেছি।
হটাৎ রিক বলে উঠলো…
রিক – অর্ক দাড়োয়ান কাকু !! কাঁপা গলায় বললো সে
আমরা দেখলাম চিয়ারে বসে থাকা কঙ্কালের পাশেই দাড়োয়ান কাকু বসে।আর তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।
রাণীমা র কথা শুনতে শুনতে আমাদের ভয় ও কমে গেলো একটু।
আমরা দাড়োয়ানের দিক থেকে খাটে রানীমার দিকে তাকিয়ে দেখি মাঝ বয়সী মহিলা এখন আর নেই সেই জায়গায় এখন বসে আছে এক বৃদ্ধা মহিলা। বয়েসের ভারে অনেকটা সামনের দিকে ঝুঁকে গেছে।রোগা, শীর্ণ কায় একটা দেহ।
বুঝতে বাকি রইলো না যে ওই মাঝ বয়সী মহিলা, কঙ্কাল আর এই শীর্ণ কায় বৃদ্ধা মহিলা সবাই রানী মার প্রতিরূপ।
ময়ূখ – আদেশ করুন রানী মা আমরা আপনার জন্যে কি করতে পারি।(কাঁপা গলায় বললো)
রানী মা – মরে যাওয়ার পর আমার দেহটা এই চিয়ারেই গলে পচে ভিতর থেকে কঙ্কালটা বেরিয়ে এসেছে।
আর ওই যে দাড়োয়ান ওর কঙ্কালটা সিঁড়ির নিচে পরে আছে।
তোমরা সকাল সকাল গ্রাম বাসীদের সাহায্যে আমাদের আত্মার শান্তি ব্যবস্থা করো।।তাতেই আমাদের মুক্তি হবে।
ঠিক আছে রানী মা আমরা তাই করবো ময়ূখ বললো।
রাণীমা – তোমরা এখন এসো।
সাবধান!! “আজ কিন্তু অমাবস্যা”
কথা গুলো শেষ হতেই অদৃশ্য হয়ে গেলো দুজনেই।
(দরজা খোলার আওয়াজ)
দরজা টা খুলে গেলো আমাদের সামনে।ঘড়িতে তখন ৮টা ৪৫ মিনিট ।
একে অপরের হাত ধরে আমরা রাজবাড়ী থেকে বেড়িয়ে এলাম।দেখলাম ময়ুখের মামা কিছু গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কে খুঁজতে এসেছেন।
ময়ূখ আগেই ওর মামা কে আমাদের রাজবাড়ী আসার কথাটা জানিয়ে রেখেছিলো।
এর পর আমরা ওনাদের সবটা খুলে বলি।
পরের দিন সকালে সবাই মিলে রানী মা আর দাড়োয়ানের শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করি।ব্যাস তারপর আমরা চলে আসি।
(আচমকা বোন বলে উঠলো)
বোন – দাদা তুই আর ওই রাজবাড়ীতে যাসনি কখনো??
অর্ক – কেঁপে উঠে বললো না.. না রে শুনেছি সরকার থেকে এখন রাজবাড়ীতে একটা স্কুল খুলেছে। জনবসতি আগের থেকে বেড়েছে অনেক।
বোন – ও আচ্ছা।ওই দাদা চল এবার অনেক রাত হয়েছে।
অর্ক – হ্যাঁ চল
দুজনেই বকা খাবো এবার মায়ের কাছে।
অর্ক বোনের হাত ধরে নিচে নামতে যাবে এমন সময় ছাদের কোণ থেকে কেউ যেনো বলে উঠলো
“নীচে যাও অর্ক”
“আজ কিন্তু অমাবস্যা”
(রানী মা বলেছেন)
কলমে মেঘা ভট্ট্যাচার্য
ধন্যবাদ “মন ও মৌসুমী” পরিবারকে ♥️
খুব সুন্দর ❤️❤️