স্বাধীনতার ভোজ

0
1380
baggout.com

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন খাই যেন ভালো ভালো থালি।
ব্যাগড়া না করে যেন কেউ খাওয়ার ক্ষণে,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।

আঃ, বিলিতি বিস্কুট আর দিশি চা,
একসাথেই দিলো স্বাধীনতায় পা।
তারপর একতাল ময়দার ফুলকো লুচি,
হলো স্বাধীনতার তপস্যায় শুচি।
তার সাথে দমের মধ্যে বন্দি আলু,
তারও হলো স্বাধীনতা চালু।

তারপর অখন্ড অপেক্ষার বন্দিত্ব,
বোঝালো শরীরের অসহায় পরাধীনত্ব।
মাঝে মধ্যে পরাধীনতার রান্নাঘরে,
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবল ঝড়ে,
শব্দ ও গন্ধের এক ভীষণ যুদ্ধের প্রমান,
করলো পৈটিক দুশ্চিন্তার অবসান।
অবশেষে প্রচুর বাসনের লড়াই,
নামিয়ে আনলো রান্নার কড়াই।

যুদ্ধের ময়দানে প্রথমে এলো ঘি ভাত,
হয়ে গেল তার পরাধীনতা কুপোকাত।
তারপর রুইমাছের মাথা নিয়ে লড়তে এলো মুগ,
পেয়ে গেল সম্পূর্ণ স্বাধীনতার যুগ।
এরপর স্বাধীনতা পেলো পাঁচমিশালী তরকারী,
একদম পুরোপুরি আগমার্কা সরকারি।
তার পেছনে এইবার কচি পাঁঠার মাংস
করলো নিজের পরাধীনতা ধ্বংস।
অবশেষে ময়দানে এলো পায়েস,
এ কিন্তু স্বাধীন হলো করে বেশ আয়েস।

তারপর আবার চললো স্বাধীনতার যুদ্ধ,
বিছানা বালিশ সব শুদ্ধ।
সাথে সাথেই বন্দি করলো ঘুম,
কিন্তু স্বাধীন হলো নাসিকা গর্জনের ধুম।

জড়িয়ে ধরা ভাত ঘুমের পরাধীনতা,
খতম করলো গরম জলে চা পাতা।
তারপর এলো সিঙ্গারা আর মুড়ি
বন্ধ হলো তাদের পরাধীনতার ঘড়ি।

নেমে এলো রাতের অন্ধকার,
আবার স্বাধীনতার লড়াই দরকার।
শুরু হলো রান্নাঘরে লড়াই,
আবার আগুনরথে চড়লো কড়াই।
রন্ধন গৃহের আওয়াজ ছ‍্যাঁক ছোঁক,
শেষ হবে কি পরাধীনতার শোক?

এইবার ময়দানে প্রথম নামা শুক্তো,
পুরো হয়ে গেল পরাধীনতা থেকে মুক্ত।
তৎপর ঘন্ট করলো মুড়ো নিয়ে বড়াই,
সম্পুর্ন হলো তার স্বাধীনতার লড়াই।
এসে সেল চিংড়ির মালাই কারি,
পরাধীনতা চলি গেল তারে ছাড়ি।
পিছে পিছে এলো সর্ষে ইলিশ ভাপে,
তার স্বাধীনতার উল্লাসে ধরণীও কাঁপে।
একদম শেষে গুড়ের রসমালাই এলেন,
এসেই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেলেন।

চলে এলো আমলকি হজমি গুলি,
এসেই বলে, স্বাধীনতার ঢেঁকুর তুলি,
উফফ্! চারিদিকে কি ফুর্তি,
সম্পুর্ন হলো স্বাধীনতার উদর পূর্তী।

তবুও যতই ঘন হয় কৃষ্ণমধ্যরাত্রি,
স্বাধীনতা বোঝে সে এক পরাধীন যাত্রী।
ভাবে স্বাধীনতা, মুক্তি তার নিদ্রা যাপনে,
আসলে স্বাধীনতার স্থান শুধুই স্বপনে।
হঠাৎ যখন ভরাপেটে ভাঙবে স্বাধীনতার ঘুম,
দেখবে চতুর্দিকে শুধুই পরাধীনতার নিঃঝুম।

  — অমিতাভ_ব্যানার্জী

অমিতাভ ব্যানার্জী Durgapur Steel Plant এর SAIL এ কর্মরত একজন অফিসার। ছোটবেলায় দুর্গাপুরের কল্লোল থিয়েটার গ্রূপের সাথে যুক্ত ছিলেন ।
একজন Voracious reader।সিনেমা পাগল মানুষ। জন্ম 1971এর 28 February মানে 47টা শীত পার হয়ে গেছে ।লেখালেখির বয়স খুব বেশি হলে এক বছর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here